মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তজুমদ্দিনে রাস্তা চওড়া করার নামে কাটা হবে ৮৫৬টি গাছ, সাধারণ মানুষের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক:   |   শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪ | প্রিন্ট

তজুমদ্দিনে রাস্তা চওড়া করার নামে কাটা হবে ৮৫৬টি গাছ, সাধারণ মানুষের ক্ষোভ

তীব্র তাপদাহে পরিবেশ বিপর্যয়ে যখন মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে এক প্রকার মরতে বসেছে ঠিক সেই সময়ে ভোলার তজুমদ্দিনে সড়কের ৮৫৬টি গাছ কাটার সকল বন্দোবস্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। তাপদহের এ দুঃসময়ে গাছ কাটার খবর ছড়িয়ে পরায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার মুচিবাড়িরকোনা বাজার টু দক্ষিণ খাশেরহাট বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫.৪৩ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। যার বরাদ্দ নির্ধারণ হয়েছে প্রায় ১১কোটি ৮৫ লাখ টাকা। রাস্তাটি টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে মেসার্স ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আগে ওই রাস্তাটি ১২ ফুট চওড়া ছিলো। এখন তা বাড়িয়ে করা হবে প্রায় ১৮ ফুট। রাস্তা চওড়া করার জন্য দুই পাশের প্রায় ৮৫৬টি গাছ কেটে ফেলার জন্য সকল প্রক্রিয়া শেষ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

ইতিমধ্যে ভোলা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গাছগুলো ক্রয় করেছে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। খুব শীঘ্রই গাছ কাটার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

সারা দেশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যখন বেশি বেশি গাছ লাগানো প্রয়োজন, তখন উন্নয়নের নামে
গাছ কাটার খবর প্রকাশ্যে আসার পর ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

সড়ক এলাকার বাসিন্দা কৃষক মোস্তাফিজ, আবু তাহের, আফসার, মনিরসহ অনেকে জানান, রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলোর ছায়ায় কৃষক ও শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষ মাঠে কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেন। এ তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে এখন রাস্তার দুপাশের বিশালাকৃতির গাছগুলো কাটা হলে মরুভূমিতে পরিণত হবে এলাকাটি। তাই এলাকাবাসীর দাবি করেন, গাছগুলো রক্ষা করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

রাস্তার পাশে অবস্থিত পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, গরমের কারণে অনেকদিন আমাদের স্কুল বন্ধ ছিলো। এখন স্কুল খুললেও গরমে স্কুলে অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পরছেন। গাছগুলোর জন্য মাথার ওপর ছাতা না থাকলেও আরামে স্কুলে যাতায়াত করতাম আমরা। গাছগুলো কাটা হলে আমরা ভিষণ অসুবিধায় পরবো।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর কবির জানান, কতিপয় দপ্তরের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের পকেট ভারী করার জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করে উন্নয়নের নামে নির্বিচারে সারা দেশে গাছ নিধনের মহাযজ্ঞ চলছে। উন্নয়ন পরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়ার আগে পরিবেশবিদ, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ না নেওয়ার কারণে উন্নয়নের নামে গাছ কেটে পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। রাস্তা সম্প্রসারণের নামে ভোলার তজুমদ্দিনের প্রায় ৮৫৬ টি গাছ কাটার খবর শুনে আমি খুবই মর্মাহত। গাছগুলো কাটা হলে মানুষ,পশু, পাখি সহ বিভিন্ন প্রাণিকুল বড় ধরনের বিপর্যয়ে পরবে। গাছগুলো রক্ষা করতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানানো হবে। প্রয়োজনে সবাইকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে গাছ রক্ষার জন্য জোড়দার কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।

ভোলা বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুব আলম জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে আমরা গাছের পরিমাণ ও দাম নির্ধারণে সহযোগিতা করেছি। পরিবেশ রক্ষায় তীব্রতাপদহের মধ্যে এই গাছগুলো না কাটাই উত্তম হবে। গাছগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করবো।

এলজিইডি ভোলা এর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, রাস্তাটি সম্প্রসারণের জন্য দুপাশের গাছগুলো কাটা হবে। রাস্তার কাজ সম্পন্ন হলে রাস্তার দুপাশে পূণরায় চারা গাছ রোপন করা হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]